আজ শনিবার, ১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব বড় দুই দল

মোরশেদ মুকুল: ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। হাতে সময় কম। তাই বসে নেই রাজনৈতিক দলগুলো। নতুন প্রজন্মের কাছে ভোটের আর্জি পৌঁছে দিতে ডিজিটাল মাধ্যমগুলোর দিকেই ঝোঁক তাদের। অনলাইন সংবাদ মাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোয় চলছে নির্বাচনি প্রচারণা। রাজনৈতিক দলগুলো এরই মধ্যে ডিজিটাল প্রচার সেলও খুলেছে। পাশাপাশি মনোনয়ন প্রাপ্তরা নিজস্ব উদ্যোগে সোশ্যাল মিডিয়া ও ওয়েবসাইট থেকেও প্রচার চালাচ্ছেন। রাজনৈতিক কর্মকান্ডের তথ্য তুলে ধরছে ফেইসবুক, ইউটিউব, গুগল প্লাস ও টুইটার অ্যাকাউন্টে।
এতোদিন যাদের ফেসবুক আইডি ছিল না তারাও নতুন আইডি খুলে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। এ ছাড়া প্রার্থীদের অনুসারী নেতাকর্মীরা তাদের আইডিতে প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন জোরেসোরে।
প্রার্থীরা নিজ বাড়িতে সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকার নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠক করছেন। ব্যস্ত সময় পার করছেন নির্বাচনের কলাকৌশল নিয়ে।
আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী গতকাল শনিবার দুপুরে যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি আয়োজিত বর্ধিত সভায় ঘরোয়া প্রচারের পাশাপাশি কর্মীদের নিয়মিত তাদের ফেসবুক আইডিতে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যেতে বলেছেন। যাদের এখনো ফেসবুক আইডি নেই তাদেরও তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন।
সভায় উপস্থিত সুনামগঞ্জ থেকে আগত আওয়ামী যুবলীগের কর্মী ফরিদুল আলমের সাথে কথা হলে তিনি জানান, তার ফেসবুক আইডি আগে থেকেই ছিল। সে সরকারের উন্নয়ন মূলক কাজের বিভিন্ন দিক তার ফেসবুকে তুলে ধরছেন। কিন্তু অপর এক কর্মী হাসান উদ্দিন সরকারের কোনো ফেসবুক আইডি ছিল না এতোদিন। তিনি নির্বাচন উপলক্ষে নিজ নামে আইডি খুলেছেন। সেখানে নিয়মিত সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক পোস্ট করছেন। তার বাড়িতে বসে নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠকের ছবি দেওয়া হচ্ছে। তার আইডিতে সরকারের দেয়া নানা প্রতিশ্রুতির কথাও বলছেন তিনি।

শুধু ফরিদুল বা হাসান নয় দেশের প্রতিটি জেলা উপজেলার নেতা-কর্মীরা ফেসবুক নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করছেন নির্বাচনের শেষ মূহুর্তে। আবার কোনো কোনো প্রার্থী নিয়মিত ভোটারদের ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে ভোট ও দোয়া প্রার্থনা করছেন।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার থেকে শুরু করে সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার।
প্রথম দিকে ব্যক্তিগতভাবে এসব ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া হয়। এখন দলীয়ভাবে প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে। শুধু উদ্যোগ নয়, এজন্য আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে দলের পক্ষ থেকে।

অপরদিকে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপিও তাদের প্রচার কার্যের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো।
নির্বাচনকে সামনে রেখে এভাবেই সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে প্রচারযুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছেন দুই প্রধান রাজনৈতিক শক্তি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অনলাইন প্রচারণার কার্যকারিতা, সজলভ্যতা এবং বিশ্বনেতাদের নির্বাচনী জয়ে এর ভূমিকা নিয়ে গবেষণার ফল বিবেচনা করে ডিজিটাল মিডিয়াকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অপপ্রচার মোকাবিলার পাশাপাশি সরকারের সাফল্য তুলে ধরতে জোরদার করা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায় আওয়ামী লীগের প্রচার-প্রচারণা।
অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর চেয়ে অনেকটা এগিয়ে থাকা দলটি আগামী নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ অনলাইন প্রচারণার সব কয়টি মাধ্যমের শতভাগ সুবিধা ঘরে তুলতে এরই মধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে।

দলীয় নেতা-কর্মীদের এসব তৎপরতাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সাধারণ ভোটাররা। যুবলেিগর সভায় আসা একাধিক নেতার সাথে কথা হলে তারা জানায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতারা সক্রিয় হওয়াতে নেতাদের সঙ্গে তাদের দূরত্ব কমছে। পাশাপাশি জবাবদিহির বিষয়টিও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। যারা সচরাচর তাদের নেতাদের কাছে পান না তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুব সহজেই নেতাদের কাছে তাদের অভাব, অনুযোগ বা প্রতিবাদ, প্রতিক্রিয়া জানাতে পারছেন। এতে দলের নেতাদেরও সুবিধা রয়েছে। তারা জানতে পারছেন নির্বাচনী এলাকার মানুষের কথা, তাদের ভাবনা।
এদিকে নির্বাচন সামনে রেখে মনোনয়ন প্রত্যাশী ও এমপি-মন্ত্রীরা ডকুমেন্টারি তৈরি করছেন। মূলত তরুণ নেতারাই ডিজিটাল প্রচারে বেশ এগিয়ে। তারা নিজেদের প্রচারে তথ্যপ্রযুক্তির সমন্বয়ে গ্রহণ করছেন অভিনব সব কৌশল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার বাড়াতে তাদের নির্বাচনি আসনের প্রতিটি গ্রাম থেকে একজন করে প্রচার কর্মী নিয়োগ করছেন।
আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক প্রচারের মধ্য দিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়াই আওয়ামী লীগের ‘মূল লক্ষ্য’। ডিজিটাল কার্যক্রমে সামাজিক মাধ্যমে প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে তাতে বিভিন্ন ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করে সরকারের উন্নয়নের বার্তা দেশব্যাপী প্রচার করবে আওয়ামী লীগ। এছাড়াও ম্যাসেজ, ফেইসবুক মেসেঞ্জারে স্বয়ংক্রিয় বার্তা প্রদান, বিভিন্ন পত্রিকার অনলাইন সংস্করণেও বিজ্ঞাপন প্রচারের পরিকল্পনা তুলে ধরবে দলটি।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ